প্রেম ভালবাসার নির্দিষ্ট কোনো প্রকারভেদ নেই।তবে যে প্রকারভেদ গুলো উল্লেখ করলাম সেগুলো সাধারনত সংঘটিত হয়ে থাকে ।
১. প্রথম প্রেম: জীবনের প্রথম প্রেম সবার কাছেই স্মরনীয় হয়ে থাকে। প্রথম প্রেমের
কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই তবে অনেকের ক্ষেত্রেই খুব কম বয়সে প্রথম প্রেম
এসে থাকে। প্রথম প্রেম বেশিরভাগ সময়ই আদতে প্রেম হয়না, সেটা হয়ে থাকে Infatuation। প্রথম প্রেম হতে পারে কোন বাল্য বন্ধু, হতে পারে
গৃহশিক্ষক বা স্কুলের শিক্ষক বা
শিক্ষিকা,
হতে পারে বয়সে বড় কোন আপু, হতে পারে কোন
ফিল্মের নায়ক বা নায়িকা, হতে পারে পাড়ার কোন হ্যান্ডসাম তরুনী বা বড়ভাই। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার জীবনের প্রথম প্রেমই একমাত্র প্রেম।
২. প্রথম দেখায় প্রেম/Love at First Site: প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের
সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই
একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ
ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। প্রথম
দেখাটা হতে পারে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে,
শপিং মল,
কলেজ,
ভার্সিটি,
কোচিং সেন্টারে, স্যারের বাসায়, বন্ধু আড্ডায়। এমনকি বন্ধুর মোবাইলে ছবি দেখেও এ ধরনের প্রেমের শুরু হতে
পারে। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের (বন্ধুকূল বা
বড়ভাই) সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ সৌন্দর্য্য ও
দৈহিক সৌন্দর্য্যের ভুমিকাই বেশি।
৩. বন্ধুত্ব থেকে প্রেম: এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু’জনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব কালের
বিবর্তনে প্রেমে রূপ নিতে থাকে,
অনেক সময়ই দু’জনেরই অজান্তে।
তবে আশেপাশের মানুষ (বিশেষত
বন্ধুকূল) কিন্তু ঠিকই খেয়াল করে।
দুঃখজনকভাবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই
অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা
পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে।
অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে
পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে – বিশেষত মেয়েরা।
৪. একরাতের প্রেম/One Night Stand: এগুলোকে প্রেম বললে পাপ হবে। ৯০%
ক্ষেত্রেই ছেলেরাই এ ধরনের প্রেমের
আয়োজক। দৈহিক বাসনাকে পূর্ণতা প্রদান
করাই এই প্রেমের প্রধান উদ্দেশ্য।
উদ্দেশ্য পূরণের পূর্বে কিছু নাম মাত্র
ডেটিং হতে পারে। উদ্দেশ্য পূরণের
জনপ্রিয় স্থান: কোন হোটেল, খালি ফ্ল্যাট,
সমুদ্রতীরবর্তী কোন শহর। এই ধরনের প্রেমের মূলমন্ত্র হলো: “আজকে না হয়
ভালোবাসো, আর কোনোদিন নয়……..”
৫. বিবাহোত্তর প্রেম: এই প্রেম শুধুমাত্র
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা
যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস
এই প্রেম প্রবল থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পূর্বপরিচিত নয় এমন দু’জনের মধ্যে
এ্যারেন্ঞ্জ বিয়ে হলে এই ধরনের প্রেম প্রবল রূপে পরিলক্ষিত হয়। প্রেম
করে বিয়ে হলে সেক্ষেত্রে বিবাহোত্তর প্রেমে ভাঁটা পড়ে বলে একটি মতবাদ
প্রচলিত আছে, কবে
এর সত্যতা পরীক্ষিত নয়। বিবাহোত্তর
প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।
৬. পরকীয়া প্রেম: বিয়ের পর স্বামী বা
স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা
মহিলার সাথে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে।
পরকীয়া প্রেমের মূল কারনগুলো
হলো:
ক. সময়ের সাথে সংসার জীবনের প্রতি
অনাগ্রহ বা তিক্ততা চলে আসা।
খ. শারীরিক চাহিদা পূরণে স্বামী বা
স্ত্রীর প্রতি একঘেঁয়েমি চলে আসা।
গ. শারীরিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে
স্বামী বা স্ত্রীর অক্ষমতা বা অপূর্ণতা।
ঘ. নিতান্তই এ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়তা, লুকিয়ে প্রেম
করার স্বাদ অনুভব করা।
মহিলাদের মধ্যে পরকীয়া এদেশে এখনো ততোটা জনপ্রিয় নয়
যতোটা পুরষদের মধ্যে। পুরুষদের পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে তৃতীয়
ব্যাক্তিটি কম বয়সী কোন অল্প বয়সী মহিলা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে যুবতীও হয়ে থাকেন।
মহিলাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি সাধারণত কোন মধ্যবয়সী পুরুষ
হয়ে থাকেন। ৩০-৪৮ বছর বয়সীদের মধ্যে পরকীয়া প্রেম বহুলভাবে পরিলক্ষিত হয়।
৭. অপরিণত প্রেম/কম বয়সে প্রেম/না বুঝেই প্রেম: এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের
প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও পড়ে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দু’জনই সমবয়সী হতে
পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেমিক তার চেয়ে বয়সে বড়ও হতে পারে।
তবে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার কম –
অর্থাৎ এ ধরনের প্রেম বিয়ে পর্যন্ত
গড়ায় খুব কম ক্ষেত্রেই।
৮. কর্মক্ষেত্রে প্রেম: কর্মসূত্রে দু’জন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে।
উক্ত দু’জন হতে পারেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর দু’জন কর্মকর্তা অথবা কোন প্রজেক্টে পরস্পরের পার্টনার। অফিসে
নতুন জয়েন করেছেন এমন কোন মেয়ের সাথে এরূপ প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য
অফিসের পুরুষ কর্মকর্তাদের মাঝে তাগিদ দেখা যায়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ
ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।
৯. মোবাইল প্রেম: বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফ্লেক্সির
দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সুত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই
মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে
সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক সময় মোবাইলে
এভাবে কথা বলে ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমের সফলতার হার খুবই কম। আসলে অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই সফলতা এ ধরনের প্রেমের মূল উদ্দেশ্য নয়।
১০. ইন্টারনেটে প্রেম: ইন্টারনেটে
চ্যাটিংয়ে বা সোসিয়্যাল মিডিয়া সাইটে
(যেমন –
ফেইসবুক,
মাইস্পেস) দু’জনের পরিচয়ের
মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের
সূত্রপাত। অনেক ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের
একজন বিদেশে অবস্থান করে। এভাবে
পরিচয়ের পর ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে
সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমে
উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে
অনেক। অনেক সময়ই কোন ছেলে মেয়ে
সেজে অন্য কোন ছেলের সাথে এমন সম্পর্ক
চালিয়ে যায়। আর তাই অনেক ক্ষেত্রেই
এ ধরনের সম্পর্ক প্রতারণায় পরিণত হয়।
পূর্বে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের
হার বেশি থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে
সাফল্যের হার কম।
১১. ত্রিভূজ প্রেম: এ ধরনের প্রেমকে বলা
যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে
দু’জন ছেলের টাগ-অফ-ওয়ার বা দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি
দু’জন ছেলের
ভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত
মেয়েকে পেতে দু’জন ছেলেই মরিয়া থাকে। ত্রিভূজ প্রেমের
ক্ষেত্রে প্রায়শঃই মেয়েরা মানসিক দ্বন্দে ভোগে –
কাকে পছন্দ করবে এই
নিয়ে। অনেক সময়ই ছেলে দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা রূপ নেয় মারামরিতে। দু’জন মেয়ে আর একজন
ছেলের মধ্যেও ত্রিভূজ প্রেম লক্ষিত হয়।
তবে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মারামারিতে
নয় বরং রূপ নেয় চুলোচুলিতে।
১২. বহুভূজ প্রেম/Multi প্রেম: একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি ২ এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই
মূলতঃ বহুভূজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই
দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায়
এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।
১৩. অসমবয়সী প্রেম: এ ধরনের প্রেমের
বৈশিষ্ট্য প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে
বয়সের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান। যদিও মেয়ের
চাইতে ছেলে কয়েক বছর বড় হলেও তা
স্বাভাবিক প্রেম হিসেবে ধরা হয়, তথাপি, যদি পার্থক্য খুব
বেশি হয় – যেমন
১২ বছর তবে তা অসমবয়সী প্রেম হিসেবে ধরা
হয়। মজার ব্যাপার হলো ছেলের
চাইতে মেয়ে এক বছরের বড় হলেও তা
অসমবয়সী প্রেম হয়ে হিসেবে ধরা হয়।
অসমবয়সী প্রেমকে এ সমাজে বাঁকা চোখে
দেখা হয়, বিশেষত যদি মেয়ে ছেলের চাইতে বয়সে বড়
হয়। অসমবয়সী প্রেম বিয়েতে রূপ নিলে দাম্পত্য জীবন শান্তিপূর্ণ হয়
না বলে একটি মতবাদ এদেষে প্রচলিত আছে,
কিন্তু এর কোন সত্যতা পাওয়া
যায়নি।
১৪. শারীরিক প্রেম/শরীর সর্বস্ব প্রেম: প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে শরীরি আকর্ষণই এই প্রেমের মূল উপাদান। আবেগ ততোটা গুরুত্বপূর্ণ
নয়।
১৫. দুধের মাছি প্রেম/অর্থসর্বস্ব প্রেম:
“যতোদিন টাকা আছে,
ততোদিন সম্পর্ক” – অনেকটা এই নীতির
বলে এই ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। অবশ্যই ছেলেরাই টাকা ব্যয় করে
থাকে এসব ক্ষেত্রে। ধনীর ঘরের ছেলেদের পক্ষে এই ধরনের সম্পর্ক বেশিদিন
টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। তবে মোটামুটি আয়ের ছেলেরা খরচের ঠেলায় অল্পদিনেই
হাঁপিয়ে ওঠে, সম্পর্কও আর বেশিদিন থাকেনা। তখন ঐসব মেয়েরা অন্য
ছেলের খোঁজে বেরোয়।
১৬. ঈর্ষাণ্বিত প্রেম: “অমুক ছেলে প্রেম
করে, আমাকেও করতে হবে”
বা “অমুকের
বয়ফ্রেন্ড আছে,আমারো চাই” – অনেকটা এমনতর
মানসিকতা থেকে এসব প্রেমের
সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমগুলো অনেক সময়ই
সাময়িক হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়ই
বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড মনের মতো না
হলেও প্রয়োজনের তাগিদে সম্পর্ক
চালিয়ে যাওয়া হয়।
১৭. জেদের বশে প্রেম: পূর্ববর্তী বা
বর্তমান বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে
অনেকটা দেখিয়ে দেয়ার (“তুমি ছাড়াও আমার
প্রেম করার লোকের অভাব নেই…….”) উদ্দেশ্যে যাকে সামনে পাওয়া যাবে ধরে তার সাথে প্রেম করাই
এ ধরনের প্রেমের মূল লক্ষ্য। মনের মতো লোক পাওয়ার বিষয়টি এখানে নগণ্য।
১৮. চড়িয়ে খাওয়া প্রেম/গাধাখাটুনি
প্রেম/ঘানি টানা প্রেম: প্রেমিক বা
প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা
লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য।
ক্লাসের ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী ছাত্রটি
এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় শিকার হিসেবে
পরিগণিত হয়। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের
প্রেমের প্রচলণ বেশি দেখা গেলেও
ছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।
১৯. অব্যক্ত প্রেম/না বলা প্রেম: নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের
অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম
হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।
২০. সুপ্ত প্রেম: একে অপরকে ভালোবাসে
কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো
ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই
সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন
সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত
প্রেমে।
২১. চুক্তিবদ্ধ প্রেম: এ ধরনের প্রেম হয়
পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে।
সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই
ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোন
ভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের। মূল
উদ্দেশ্য হলো কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে
নিজেদের মধ্যে প্রেম দেখিয়ে কোন বিশেষ
স্বার্থ চরিতার্থকরণ। শোবিজ ও
মিডিয়ার তারকাদের মধ্যে এ ধরনের প্রেম
বেশি দেখা যায়।
২২. মিথ্যে প্রেম/অভিনয় প্রেম: এ ধরনের
প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার
দু’জনের যেকোন একজন প্রেমের অভিনয় করে যায়। যখন প্রেমিক বা
প্রেমিকার কেউ একজন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে আরম্ভ করে তখন এই প্রেমের সমাপ্তি
ঘটে। এ ধরনের প্রেমের পরিণতিও যেকোন একজনের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।
২৩. ২য় ইনিংস প্রেম/Old is Gold প্রেম/Revived প্রেম: পূর্ববর্তী
বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে
পুনরায় জুড়ে গিয়ে এই প্রেম করা হয়।
২৪. ব্ল্যাকমেইল প্রেম/অনিচ্ছাপূর্বক প্রেম/জোড় খাটানো প্রেম: এটাকেও প্রেম বললে পাপ হবে। জোড়পূর্বক এসব প্রেম করা হয়ে থাকে।
এর শিকার হয়ে থাকে মেয়েরাই। পাড়ার বখাটে ছেলে বা বড় ভাই, কলেজের বখাটে
ছাত্র, কর্মক্ষেত্রে উপরস্থ কর্মকর্তা বা বস প্রধানত এরাই এ ধরনের
সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হন।
২৫. গায়ে পড়ে প্রেম/নাছোড়বান্দা প্রেম: মেয়ে কোন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় তবুও ছেলে জোড় চেষ্টা চালিয়ে যায় এমন প্রেমে।
অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতিতে মেয়েরা সরাসরি না বলতে পারে না যার মাশুল
তাদেরকে পরে দিতে হয়।
২৬. বিদেশী প্রেম/পরবাসী প্রেম: এ ধরনের
সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের
মধ্যে অন্ততঃ একজন বিদেশী হয়।
২৭. অসাম্প্রদায়িক প্রেম: এ ধরনের
প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দু’জনে
দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে
থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে
সমর্থন করেনা। বিশেষতঃ হিন্দু-মুসলমান
ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি
বিতর্কের সৃষ্টি করে।
২৮. চাঞ্চল্যকর প্রেম/আলোচিত প্রেম: এ
ধরনের প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকা যাই
করেন না কন তা মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
হিসেবে প্রচার করা হয়। সাধারণত
শো-বিজ আর মিডিয়ার তারকা ও সেলিব্রেটিরা
এ ধরনের প্রেম করে থাকেন।
২৯. ঐতিহাসিক প্রেম: এইসব প্রেমের
কাহিনীর অবসান ঘটেছে অনেক আগেই কিন্তু
আজো রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। এখনো এসব
প্রেমকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো
হয়।
৩০. ভাড়াটে প্রেম/ভ্রাম্যমাণ প্রেম/Roaming প্রেম: এ ধরনের প্রেমের
প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া
খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা
নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেন্ঞ্জ করার মতো।
৩১. প্রেমময় প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক
আর প্রেমিকা দু’জনেই একজন আরেকজনের
দিকে প্রেমময় ভঙ্গিতে ঘন্টার পর ঘন্টা
তাকিয়ে থাকেন, হাত ধরে বসে থাকেন
কোন রেস্টুরেন্টের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে, সারাক্ষণ I Love You বলে আর শুনেও ক্লান্তি আসে না তাদের। সারাদিন প্রেমের পর মোবাইলে ১২টার
পরও কম জান না তারা।
৩২. ঝগড়াটে প্রেম: সারাক্ষণ দু’জনের মধ্যে
খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই
প্রেমের বৈশিষ্ট্য। কিছুক্ষণ হয়তো দু’জনে শান্ত থাকে, তারপর আবার কিছু
না কিছু একটা নিয়ে একজন শুরু হয়ে যায়। এ ধরনের প্রেমে
ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়,
কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই
হয় ফোনে। বন্ধুকূল সর্বদা দু’জনের ঝগড়া মিটাতে ব্যস্ত থাকে। মেয়ে তার সখীদের কাছে এই ঘনঘন ঝগড়ার কথা বলে বেড়ায়।
৩৩. সমলিঙ্গীয় প্রেম: আমাদের দেশে এখনো
খুব একটা প্রচলিত না হলেও বাইরের
অনেক দেশেই এই ধরনের প্রেমের প্রচলণ আছে।
দু’জন ছেলের মধ্যে হলে তাদেরকে
Gay বলে আর দু’জন মেয়ের মধ্যে হলে Lesbian।
৩৪. অমিল প্রেম/দুনিয়াছাড়া প্রেম: এই
প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে
কথাবার্তা,
মত,
পছন্দ,
অপছন্দ কোন দিক দিয়েই কোন মিল থাকেনা, তারপরও কিভাবে যেন সম্পর্ক টিকে থাকে।
৩৫. ‘আজো তোমায় ভালোবাসি’
প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকার
বিচ্ছেদ ঘটেছে আগেই। তবুও আজো তারা একে অপরকে ভালোবাসেন। নীরবে
চেয়ে যান সেই মানুষটির সঙ্গ যার সাথে একসঙ্গে জীবন কাটাতে পরিস্থিতিই
ছিলো একমাত্র ও সবচেয়ে বড় বাধা।
৩৬. ব্যর্থ প্রেম: এবং সবশেষে আছে ব্যর্থ
প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই
শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে
ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ
বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব
প্রত্যাখান দিয়ে। কখনো কখনো
ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার
বাড়ি আর কখনো কখনো গণধোলাই।
অনেক সময়ই ব্যর্থ প্রেমের পরিণতি হয়
করুন। কেউ দেবদাস হয়ে যায়, কেউবা
মেয়েদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে ও “দুনিয়ার সব মেয়ে
এক” এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হয়। দুর্বল মানসিকতার কেউ কেউ
আত্মহননের পথও বেছে নেয়।
******বি দ্র: প্রেম খুবই পরিবর্তনশীল ও ব্যাক্তিভেদে এর সংজ্ঞা ভিন্ন। আর আমার দেয়া প্রকারভেদগুলোর সাথে কারো কারো দ্বিমত থাকাটা স্বাভাবিক।
আমি দাবী করছি না এখানে সব ধরনের প্রেমের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু অনেক ধরনের
কথা বলা হয়েছে এটা সত্য। প্রকারভেদগুলো আলোচনার সময় যতোটা সম্ভব
নিরপেক্ষতা অবলম্বনের চেষ্টা করা হয়েছে। কারো কারো কাছে এই প্রচেষ্টা ধৃষ্টতা
মনে হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
--------ওমর ফারুক
0 comments:
Post a Comment